1. admin@dainikamarbiswanath.com : admin :
শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
জগদিশপুর সমাজ কল্যাণ সংস্থার নতুন কমিটি গঠন বিশ্বনাথে বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন বিশ্বনাথে নিউলাইফ ‘মা ও শিশু’ ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন জগদিশপুর সমাজ কল্যাণ সংস্থার ইফতার মাহফিল সম্পূর্ণ ২৬ মার্চ বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের পুস্পস্তবক অর্পন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বিশ্বনাথে বিএনপি’র পুস্পস্তবক অর্পন স্বপ্নসিঁড়ি কর্তৃক মাহে রামাদ্বান উপলক্ষে স্বল্প আয়ের পরিবারের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ সম্পন্ন। লন্ডনে দেওকলস দ্ধীপাক্ষিক স্কুল এন্ড কলেজের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত জগদিশপুর সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র পক্ষ থেকে প্রবাসীদের সংবর্ধনা মরহুম হাজী আব্দুল মতিন মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান বর্ণাট্য জীবনী

দৈনিক আমার বিশ্বনাথ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ২১৬ বার পঠিত

ফখরুল ইসলাম খান:: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল বিশ্বের বিষ্ময়! পৃথিবীর সামরিক যুদ্ধের ইতিহাসের এক গবেষণার বিষয়বস্তু। পৃথিবীর সামরিক যুদ্ধের ইতিহাসে একজন সামরিক সর্বাধিনায়ক ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন গণপরিষদ সদস্যের পরিচালনায় বাঙ্গালী’র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ছিল ইতিহাসের প্রথম সফল ‘‘গণযুদ্ধ’’। আধুনিক মরণাস্ত্রে সু-সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম-শক্তিশালী-সুশৃংখল একটি সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ শূন্য হাতে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে পরাজিত করে বাঙ্গালী’র স্বাধীনতা অর্জন পৃথিবীর সামরিক যুদ্ধের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। আর সে বিরল ঘটনার শ্রষ্টা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী। আর তার সফল অংশীদার মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী’র অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহচর ও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত ব্যক্তিত্ব যিনি দীর্ঘদিন থেকে নীরবে নির্ভয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী’র আদর্শকে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সাংবাদিকতা, জাতীয় রাজনীতির সাথে সাথে সামাজিক আন্দোলনে আপোষহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি আর কেউ নন, বাঙ্গালী’র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মুজিব নগর সরকারের প্রবাসী এডভাইজারি কমিটির সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন কারী সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার কৃতিসন্তান তিনিই এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান (সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য),।
জন্মঃ-
এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারে ১৯৪৬ সালের ১৬ই জানুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা মরহুম ফিরোজ খান একজন সমাজ সেবক, দাতা ব্যক্তি ও মাতা মরহুমা মুছাম্মাৎ নরুননেছা খানম ধর্মপরায়ণ মহিলা ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।
শিক্ষা ঃ-
এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান তাঁর নিজ গ্রাম শ্রীধরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপান্তে, মাধ্যমিক পর্যায়ে বিশ্বনাথ রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি ও সিলেট এম.সি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। সিলেট এম.সি কলেজে লেখা-পড়া করলেও ১৯৬৮ সালে মদন মোহন কলেজ থেকে স্নাতক (বি.কম) ডিগ্রী লাভ করেন। বি.কম অধ্যয়ণরত অবস্থায় যুক্তরাজ্যে সি.এ পড়ার জন্য যোগাযোগ করেন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ স্থাপন করে এফ,সি, সিএ-বিএ (অনার্স) ও লেদার টেকনোলজি কোর্সসমূহে ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। কিন্তু লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনারের অসহযোগিতায় তিনি তথায় ভর্তি হতে পারেন নি। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এল.এল.বি পাস করেন। ১৯৬৮ সালে দেশে যখন ৬ দফা আন্দোলন শুরু হয় তখনই এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঢাকা সিটি কলেজে এল.এল.বি অধ্যয়ণরত অবস্থায় ১৯৬৮ সালে শেরে বাংলা সগরস্থ ষ্টাফ ওয়েলফেয়ার হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান (অবৈতনিকভাবে) হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন।
জাতীয় রাজনীতি ঃ
সিলেট তথা বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে যার রয়েছে বিশেষ পরিচিতি এবং যিনি (এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান) পেশায় একজন আইনজীবি তবে তাঁর পেশাগত পরিচয়ের চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়টাই বেশী। তাই স্কুল জীবনে নেতৃত্ব দানের কলা-কৌশল রপ্ত করেন। তিনি কলেজ জীবনে ১৯৬৪ সানে সিলেটের স্থানীয় ছাত্র সংগঠন আইডিয়েল পার্টিতে যোগদান করেন। অতঃপর ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করে ১৯৬৭ সাল পযর্ন্ত বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।১৯৬৮ সালে দেশে যখন ৬ দফা আন্দোলন শুরু হয় তখনই এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৬৭ সালে বিশ্বনাথ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।১৯৬৭ সাল ১৯৭৮ পযর্ন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশ্বনাথ থানা ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭০ সালে অনুষ্টিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সিলেট’র বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ আসন থেকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিপুল ভোটে এম,এন,এ নির্বাচিত হন। নুরুল ইসলাম খান বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী’র বিশ্বনাথ থানার নির্বাচন পরিচালনা করেন। নির্বাচনের পর জনাব নুরুল ইসলাম খান বিশ্বনাথ থানা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী’র বিশ্বনাথ থানার নির্বাচন পরিচালনা করাকালীন সময় ওসমানী’র সাথে তার ঘণিষ্ট সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
জাতীয় সংসদ সদস্য ঃ-
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের প্রথম নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-দক্ষিন সুরমা) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে জনাব এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান’র পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ও বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ ও মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ সিলেটে’র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জনাব খানের বিপক্ষে ছিলেন। মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ ও মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ সিলেটে’র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ’র কথা শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেনারেল ওসমানীকে বলেছিলেন জনাব এডভোকেট নুরুল ইসলাম খানকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে। জবাবে জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বললেন- আপনার না হয় একটি আসন হারালো তাতে কি হবে? তবে এ আসনে আপনি (বঙ্গবন্ধু) অথবা আমি (বঙ্গবীর) নির্বাচন করলে হারতে পারি? কিন্তু নুরুল ইসলাম খান অবশ্যই বিজয় অর্জন করবে। ওসমানী’র সাথে ঘণিষ্ট সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার কারণে এবং তারই জোর লবিং এ ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতাদের বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনাব এডভোকেট নুরুল ইসলাম খানকে (অল্প বয়সে) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হন। সকল বাধাঁ উপেক্ষা করে জেনারেল ওসমানী’র সেই ধারণার প্রতিফলন ঘটিয়ে জনাব এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান ১৯৭৩ সালে অনুষ্টিত বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের প্রথম নির্বাচনে সিলেট-২ বিশ্বনাথ-দক্ষিন সুরমা আসন থেকে (সংসদের ইতিহাসে এ পযর্ন্ত সর্বকনিষ্ট) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সমাজ সেবা ও এলাকার উন্নয়ন ঃ-
এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান পেশায় একজন আইনজীবি তবে তাঁর পেশাগত পরিচয়ের চেয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয়টাই বেশী। এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান ১৯৭৩ সালে অনুষ্টিত বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের প্রথম নির্বাচনে সিলেট-২ বিশ্বনাথ-দক্ষিন সুরমা আসন থেকে (সংসদের ইতিহাসে এ পযর্ন্ত সর্বকনিষ্ট) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর প্রচেষ্টায় বিশ্বনাথে টেলিগ্রাম অফিস ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হয়। তিনি বঙ্গবীর ওসমানী’র সক্রিয় সহযোগিতায় বিশ্বনাথ-রশিদপুর রাস্তা পাকা করেন। তিনি বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর রাস্তা, সিলেট-মোগল বাজার রাস্তা, নাজিরের বাজার-দাইদপুর রাস্তা, বিশ্বনাথ-রামপাশা রাস্তা, রামপাশা-লামাকাজী রাস্তা, বিশ্বনাথ-খাজান্সি রাস্তা, বিশ্বনাথ-হাবড়া বাজার রাস্তা এবং বৈরাগী বাজার-সিঙ্গেরকাছ রাস্তা সমূহের উন্নতি সাধন করেন। এছাড়া রামপাশা রাস্তা থেকে শ্রীধরপুর পয়র্ন্ত রাস্তা করেন যা এমপি সড়ক নামে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত।
১৯৭৭ সালে তিনি আইনজীবি হিসেবে সিলেট বারে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ করেন।এছাড়াও ঝড়পরধষ ডবষভধৎব অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ইধহমষধফবংয (ঘএঙ) এর চেয়ারম্যান, টঝওঝ এর লাইব্রেরীর সদস্য, সিলেট রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ও কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সদস্য, মেম্বার অফ ইন্টারন্যাশনাল বার, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার ও সিলেট জেলা বার এসোসিয়েশনের সদস্য। তিনি সাপ্তাহিক ‘‘বাংলার মাটি’’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।
বাংলাদেশ জাতীয় জনতা পার্টি গঠন ঃ-
১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সকল রাজনৈতিক দল বাতিল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তথা ’’বাকশাল’’ (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্টার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। একই বৎসর ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়া, নতুন আইন পি,পি,আর জারী করে কতিপয় শর্ত আরোপের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার অনুমতি দিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান ও অন্য কয়েকজন মিলে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী’র নেতৃত্বে ১৮৭৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় জনতা পার্টি গঠন করেন। তিনি জাতীয় জনতা পার্টির নাম প্রস্তাবক। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ওসমানীর পরেই জনাব নুরুল ইসলাম খানের স্থান। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী’র গঠিত পার্টির প্রতিষ্ঠাতালগ্ন থেকে জনাব খান দলের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান পার্টি গঠনে প্রতিষ্টাতা সদস্য হিসেবে গুরুত্ব পূর্ণ রাখেন। ১৯৭৮ সন এবং ১৯৮১ সনে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিলে জনাব খান পার্টির অন্যতম নেতা হিসেবে বৃহত্তর সিলেট জেলার নির্বাচন পরিচালনা করেন। তিনি জাতীয় জনতা পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৭ সনের ২রা অক্টোবর জাতীয় জনতা পার্টির জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং বার বার নির্বাচিত হয়ে অদ্যবদি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শুধু তাই নয় তিনি নয় দলীয় গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান ঃ
নির্বাচনত্তোর বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের ডাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সাড়া দিয়ে সর্বক্ষেত্রে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে তাঁর ভূমিকা গৌরব উজ্জল ছিল। বাংলাদেশের জনগণ এই রকম অপূর্ব ঐক্যের মাধ্যমে, বহু অস্ত্র রক্তের বিনিময়ে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিগত একক সত্ত্বার সঙ্গে স্বাধীনতার অদম্য স্পৃহাকে মিশিয়ে দিয়ে, জীবন আর অঙ্গের বিনিময়ে স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে।২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে রাত ক্রেক ডাউনের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রথম পর্বে বালাগঞ্জের শেষ সীমান্তে শেরপুর হানাদার বাহিনী’র মুখোমুখী যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। পরবর্তীতে ভারতে চলে যান। তথায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা সমাধান কল্পে গঠিত লন্ডনস্থন ইউনাইটেড কিংডম ইমিগ্রেশন এডভাইজারী সার্ভিস এর পরিচালক মিঃ এনেলস করিমগঞ্জ অঞ্চলে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মুজিব নগর সরকারের ‘‘ইমিগ্রেশন এডভাইজারী কমিটি’’ (ওসসরমৎধঃরড়হ অফারংড়ৎু ঈড়সসরঃঃব) গঠন করে কর্ণেল এম.এ.রবকে সভাপতি করে জনাব এডভোকেট নুরুল ইসলাম খানকে সেক্রেটারীর প্রদান করা হয়। উক্ত কমিটি তখন করিমগঞ্জে একটি বৃহত্তর ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করে ইমিগ্রেশন এডভাইজারী কমিটি’র কার্য্যালয় স্থাপনের মধ্যে দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্্রটারনেল কমিটির এফেয়ার্স মিনিষ্ট্রি ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের হাই কমিশনারের কার্য্যালয়ের সাথে জনাব খানের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তাঁর এ যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে সফলতা লাভ করেছিলেন। নুরুল ইসলাম খানের এই মহৎ কর্মকান্ডের সংবাদটি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী’র কাছে পৌঁছতে সময় লাগেনি। তাই ওসমানী এ কর্মট যুবককে ডেকে পাঠান। কেননা ৭০ এর নির্বাচনী প্রচারণার সময় ওসমানী তাঁকে জানতে ও বুঝতে পেরেছিলেন। নেতার ডাকে জনাব খান বসে থাকতে পারেন নি। তিনি কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের সাথে দেখা করলেন। ওসমানী তাঁকে নিজের সকল কাজকর্মে সহযোগীতা দানের লক্ষ্যে উপদেষ্টা হিসেবে তথায় কাজ করতে বলেন। এক কথায় অলিখিতভাবে জনাব খান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের পি.এস হিসেবে কাজ করেন। এভাবে ২/৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর দেখতে দেখতে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশের সমগ্র অঞ্চলে যুদ্ধ শুরুর পস্তুতি চলে ৩রা ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী’র সাথে তুমূল যুদ্ধ শুরু হলে জনাব খানের করিমগঞ্জস্থ সহযোগিরা তাকে আসার জন্য টেলিগ্রাম করেন। বিষয়টি বঙ্গবীরের কাছে বললে, তিনি তাকে বলেন- অপেক্ষা করুন আমি নিজে বিমানে আপনাকে পৌছিয়ে দিব। ১৩ই ডিসেম্বর ওসমানী সাহেব নুরুল ইসলাম খানকে ডেকে পাঠান এবং ১৪ই ডিসেম্বর সঙ্গী (নুরুল ইসলাম খানসহ) সাথী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী রণাঙ্গণ পরিদর্শনের লক্ষ্যে বিমানযোগে কলকাতা দমদম বিমান বন্দর ত্যাগ করেন। দিনাজপুর সীমান্ত সংলগ্ন দিনাজপুর সেক্টর পরিদর্শন করেন ঐ দিনই জনাব খানকে কুম্ভীগ্রাম বিমান বন্দরে ছেড়ে দেন। জনাব নুরুল ইসলাম খান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী’র সাথে থেকে সর্বত্র সহযোগিতা দানের মাধ্যমে ওসমানী’র একজন বিশেষ সহকারী হিসেবে জান-বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয় দিবসের দিন ওসমানীর হেলিকাপ্টারে আক্রমন করার পূর্ব মহুর্ত পযর্ন্ত ওসমানীর সফর সঙ্গী ছিলেন।
মুক্তিবাহিনী দ্বারা মুক্তিযোদ্ধা লীডার গ্রেফতার !
তিনি দেশ স্বাধীন হবার পরদিন ১৬ই ডিসেম্বর নিজ এলাকায় এসে সাধারণ জনগণের সাথে কতিপয় মুক্তিবাহিনী নেতৃবৃন্দ’র দ্বারা বিভিন্নভাবে অন্যায়, অসদাচরণের কথা জানতে পেরে, মুক্তিবাহিনী দায়িত্বপ্রাপ্ত (ল্যাপ্টেন্যান্ট কর্ণেল আব্দুর রৌপের) কমান্ডারের সাথে দেখা করে এর প্রতিবাদ করেন এবং জনগণের কাছে কোনো অন্যায় দাবী-দাওয়া না করা ও তাদের সকল ধরনের চাহিদা পুরণের অঙ্গিকার করেন। বুক ভরা আশা নিয়ে তার নিজ বাড়ীতে রাত যখন ঘুমাবেন তখন মুক্তিবাহিনী’র কতিপয় উশৃংখল কর্মী তাকে গ্রেফতার করে বিশ্বনাথ থানা সদরে মুক্তিবাহিনী’র ব্যারাকে নিয়ে আসে। মুক্তিবাহিনী’র দায়িত্বপ্রাপ্ত (ল্যাপ্টেন্যান্ট কর্ণেল আব্দুর রৌপের) কমান্ডারের কাছে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে জবাবে বলা হয় ৪নং সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশ গ্রেফতার করে তাকে সেক্টরের সদর (সুনামগঞ্জ) অফিসে রিপোর্ট করার জন্য। ঐদিন রাত্রে বিশ্বনাথ উপজেলার ধর্র্মদা গ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগের জেলা নেতা এডভোকেট শাহ মোদাব্বীর আলী (মানিক মিয়া), রাজনগর গ্রামের মরহুম আব্দুন নুরের বাড়ীতে হামলা দিয়ে তাদেরকে না পেয়ে আব্দুন নুরের পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। মুক্তিবাহিনী দায়িত্বপ্রাপ্ত ল্যাপ্টেনেন্ট কর্ণেল আব্দুর রৌপ হয়তো জানেন না নুরুল ইসলাম খানকে গ্রেফতারের পরিণাম কি হতে পারে? রাতে হয়তো অনেকে জানে না তাঁর গ্রেফতারের খবর, কিন্তু সকাল হলে অবশ্যই এলাকার মানুষ যখন জানবে যে মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠককে গ্রেফতার করা হয়েছে? অবস্থা কি হতে পারে এ কথা বুঝতে পেরে নুরুল ইসলাম খান কর্ণেল আব্দুর রৌপকে পরামর্শ দিলেন এলাকায় কোনো ধরনের বিশৃংখলা যদি না চান? তাহলে রাতেই তাকে সুনামগঞ্জ চালান করার জন্য। অবশেষে জনাব নুরুল ইসলাম খানের পরামর্শে তাকে রাতের আধাঁরে পাঁয়ে হেটে বিশ্বনাথ থেকে ৮/১০ জন ফৌর্সের একটি ঠিম দিয়ে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে চালান করা হয়। তখন আজকের মতো এতো গাড়ীও ছিলনা। যাত্রাপথে তাঁর সাথে থাকা অনেক ফৌর্স দক্ষিন সুরমা এলাকার থাকায় অনেকে থাকে জানতো তাই তাদের আবদার ছিল, জনাব খান সাহেব যদি আপনার এলাকার লোকজন জানতে পারে আপনাকে আমরা গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছি, তাহলে আমাদের রক্ষা নেই? জনাব খান তাদেরকে আশ্বস্থ করেছিলেন তোমরা চিন্তা করনা, আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি হতে দেবনা। তাই হলো একজন গ্রেফতার কৃত ব্যাক্তিকে যেভাবে নেয়া হচ্ছে তাতে লোকজনের বুঝার কোনো উপায় ছিল না। জনাব খান আগে হাঁটছেন পিছনে সৈন্যবাহিনী পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই ছিল যাত্রার ধরণ। ভোর রাত্রে রওয়ানা করে জনাব খান বিশ্বনাথ উপজেলার আমতৈল বাজারে গেলে পরে সকাল হয়ে যায়। লোকজন তাকে পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা নিয়ে আলাপ চারিতা হয় ও সকালের নাস্তা করেন সেখানে। পাঁয়ে হেটে লামাকাজী ইউনিয়নের বুরকী বাজার হয়ে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে মুন্সির গাঁও এলাকায় জোহর হয় এবং তারই পরিচিত একজনের চাপাচাপিতে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করেন সেখানে। তারপর ধীরস্থির ভাবে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। তখন পযর্ন্ত জনাব খান তাকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে তা কাউকে বুঝতে দেন নি?। এদিকে জনাব নুরুল ইসলাম খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই খবরে সিলেটে মুক্তিবাহিনী’র হেডকোয়ার্টারে তোলপাড় চলছে। সে খবর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী’র কাছে পৌছলে পরে গোটা সিলেট অশান্ত হয়ে পড়ে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও বিশ্বনাথের মধ্যে রীতিমত কিয়ামত ঘটে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী’র আদেশ যে কোনো উপায়ে নুরুল ইসলাম খানকে আজকের মধ্যে মুক্ত করে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সি.আর দত্ত্ব, সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও এনাম আহমদ চৌধুরীসহ সবাই হন্য হয়ে খোজছেন নুরুল ইসলাম খানকে তো পাওয়া যাচ্ছে না?। এরই মধ্যে ৪নং সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী ও বিশ্বনাথে মুক্তিবাহিনী দায়িত্বপ্রাপ্ত ল্যাপ্টেনেন্ট কর্ণেল আব্দুর রৌপসহ দায়িত্বশীল অনেককে সিলেট তলব করা হয়েছে। দিনের শেষ প্রান্তে পড়ন্ত বিকেলে জনাব খান বর বেশে হাজির হন ৪নং সেক্টরের (সুনামগঞ্জ) সদর দপ্তরে। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হন বীরপ্রতিক এনাম আহমদ চৌধুরী জনাব খানের খোঁজে। সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী ও বীরপ্রতিক এনাম আহমদ চৌধুরী শান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে জনাব খানকে সিলেট নিয়ে আসলে পরে এবং নুরুল ইসলাম খানের মতো উদার মনের ও প্রতিশোধ পরায়ণ লোক না হওয়ায় বিনা শর্তে ক্ষমা করার কারণে গ্রেফতার নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটে।
পারিবারিক জীবন ঃ
নুরুল ইসলাম খান ১৯৮১ সালে রোকশানা ইসলাম চৌধুরীর সাথে বিবাহে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে ৬১ হাউজিং এষ্টেট, সিলেট সিটিতে বসবাস করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা